কয়েকবছর আগে পদ্মা নদীর প্রবল ভাঙনের শিকার হয়ে পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি হারায় দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের অরঙ্গাবাদ ও নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চারাখালী এলাকার শত শত পরিবার। জীবন ও জীবিকার তাগিয়ে নদী ভাঙন মানুষগুলো নতুন করে ঘর সংসার শুরু করতে অনেকেই অন্যত্র চলে যান। কিন্তু যাদের সহায় সম্বল বলতে কিছুই ছিল না তারা নিরুপায় হয়ে আশ্রয় নেয় কাঁশিয়াখালী বেঁরিবাধের রাস্তার পাশে কল্যানশ্রী এলাকায়। এমন পরিবারের সংখ্যা একেবারে কমও নয়। ২ থেকে ৩’ শতাধিক পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছে এখানে। আর এরমধ্যে রাস্তার পাড়ে বসতি গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০টি পরিবারের।
রাস্তাঘেষেই সারিবদ্ধভাবে তোলা হয়েছে ঘরগুলো। এসব পরিবারের সদস্যরা কেউ দিনমজুর, কেউ ফেরি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে আবার কেউ স্কুলে আচার-ঝালমুড়ি ও কেউ কেউ ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ও চলমান লকডাউনের কারনে থমকে গেছে এদের জীবন জীবিকা। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে এখানকার মানুষেরা। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা কল্যানশ্রী এলাকার মানুষেরা কর্মহীন হয়ে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। অনেকের ঘরেই খাবার নেই। খেয়ে না খেয়ে কাটছে তাদের জীবন। দুটি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সবার নজরে আসে না মানুষের দুঃখ দুর্দশার চিত্র। যে কারনে সামাজিক সংগঠন কিংবা সরকারী সহযেগিতা আওতায় আসে না।
করোনার দূর্যোগে সরকার প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সহায়তা কর্মসূচীর মাধ্যমে কর্মহীনদের খাবারের ব্যবস্থা করলেও তা পাচ্ছে না তারা। তাদের অভিযোগ, এখানকার বাসিন্দারা যে কোন দুর্যোগে স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যহৃত হওয়ার পরও কোন ধরনের সহযোগিতা পায় না। সবসময়ই অবহেলিত নদী পাড়ের মানুষেরা। চাতক পাখির মতো আকাশের পানে তাকিয়ে থাকলেও মিলে না সেই কাঙ্খিক বস্তুর দেখা।
নয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অরঙ্গবাদ এলাকার বাসিন্দার নির্বাচিত ইউপি সদস্য ইয়ার আলীর খাদ্য সহযেগিতার কথা স্বীকার করলেও জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১ ও ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কর্তৃক কোন ধরনের সুবিধা পায়নি বলে তারা অভিযোগ করেন। ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মাবল শেখের বিরোদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। করোনা দূর্যোগে সরকারের একাধিক বরাদ্দ আসলে এখানকার বাসিন্দারা কোনোটাই পাননি বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে কল্যানশ্রী এলাকার কিতাব আলী নামের এক ব্যক্তি জানান, করোনার কারনে কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে আছি। আমরা কী অবস্থায় আছি এ ব্যাপারে কোন খোঁজ খবরই নেয়নি জনপ্রতিনিধিরা।
জয়কৃষ্ণপুরের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ষাটোর্দ্ধ মরিয়ম নামের এক নারী অভিযোগ করে বলেন, আমার ঘরে খাবার নেই । অনেক কষ্ট করে দিন চলে কিন্তু এখানো পর্যন্ত কেউই খবর নেয়নি।
এ ব্যাপারে জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সরকারের খাদ্য কর্মসূচির খাদ্য আমরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণ করেছি। যদি কেউ না পেয়ে থাকে তাহলে আমরা তাদের পরবর্তীতে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
এখানকার মানুষেরা জানান, করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারলে এ ধরনের সহযোগিতার মুখাপেক্ষী হতে হবে তাদের। করেনা থেকে মুক্তি পেলে প্রত্যেকে কর্মের মাধ্যমে জীবিকার সন্ধানে তারা ঘর থেকে বের হবেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.