চাঁদের পাহাড় বুক ক্যাফের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের মোলাশীকান্দা এলাকায় ছবি আঁকা উৎসব ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার সকালে উপজেলার মোলাশীকান্দা উদ্যোগী সংঘের ক্লাব প্রাঙ্গনে সাহিত্য অনুষ্ঠান ‘বই পড়ার সেকাল একাল’ অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন গল্পকার ও সাংবাদিক অলাত এহ্সান। তিনি বলেন, ‘জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে আমরা দেখি একটা পুকুর কেন্দ্র করে একটা গ্রামের পত্তন হচ্ছে। গ্রামায়ণের ইতিহাসই এমন নদী, পুকুর, বনের পাশে গ্রাম গড়ে উঠেছে। বড় বটগাছের নিচে বাজার বসছে। একটা লাইব্রেরি, বুক ক্লাব গ্রামের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এখানেই চাঁদের পাহাড় বুক ক্যাফে গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর বিজয় দিবসের দিনে এর সূচনা হয়ে আজ তার প্রথম বর্ষপূর্তি হলো। আমাদের উচিত হবে একে সমৃদ্ধ করা, বাড়িয়ে তোলা।’
সাংবাদিক এহ্সান আরো বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে নবাবগঞ্জের একটা গ্রামে শিক্ষাজীবনের শুরুতে স্কুলে লাইব্রেরি থাকার ব্যাপারটাই আমাদের মাথায় ছিল। স্কুলে শিক্ষাদপ্তর থেকে পাওয়া ‘চারুপাঠ’, স্কুল ম্যাগাজিনই ছিল সে অর্থে ‘বাইরের বই’। পাঠ্য বইয়ের বাইরে পড়ায় শিক্ষকরাও তেমন উৎসাহ দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। বান্দুরা হলিক্রস উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট ইউফ্রেজীস গার্লস হাইস্কুল, নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বাইরে এই উপজেলায় কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি থাকার কথাই শুনিনি। ফলে আমার আগে ও পরে বড় একটা প্রজন্ম শিশু সাহিত্য পাঠ ছাড়াই শৈশব-কৈশোর পার করেছে। ফলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শহরের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অসম্ভব, অসম্ভব প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়; সেখানে শিক্ষক যে উদাহরণ টেনে কথা বলেন, তা বুঝতেই কষ্ট হয় গ্রাম থেকে যাওয়া ছেলেমেয়ের।
একই অবস্থায় পড়তে হয়েছে আমাকে, ঢাকার বাইরে একটা মফস্বল জেলা শহরের কলেজে পড়াকালে নিভৃত লাইব্রেরিতে পড়ে নিজেকে তৈরি করতে হয়েছে। কিন্তু শিশু-কিশোর সাহিত্য পাঠের যে ঘাটতি, তা এখনো আমার মধ্যে রয়ে গেছে।
একটা উপজেলা শহর, প্রবাসী অধ্যুসিত এলাকা, প্রভাবশালী ধনী রাজনীতিকদের নির্বাচনী আসন হলেও নবাবগঞ্জে এখনো সরকারি কোনো লাইব্রেরির হয়নি, ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমৃদ্ধ পাবলিক লাইব্রেরি গড়ে উঠেনি। অর্থনৈতিক উন্নতি, পাকা ঘরবাড়ি, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে যদি ঘরে ঘরে দুই-দশটা আউট বুক ঢুকত, পড়ার চর্চা হতো, তাহলে নবাবগঞ্জের চিন্তা-সাংস্কৃতিক উন্নতি হতো। সেটাই এখন জরুরি।’’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক কবি আমিনুর ইসলাম সুলতান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, চাঁদের পাহাড় বুক ক্যাফের অনুষ্ঠানে আমি কঁচি-কাঁচাদের ছবি আঁকা উৎসবে স্বর্তফূর্ততা দেখে আমরা মনটা আনন্দে ভরে উঠেছে। ওরাই আগামীর ভবিষ্যত। ওদেরকে আগামীর জন্য আমাদের গড়ে তুলতে হবে। মোলাশীকান্দা উদ্যোগী ক্লাবের মাঠ আজ শিশু কিশোরদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। গ্রামে এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। ওদেরকে এগিয়ে নিতে যেতে হবে। চাঁদের পাহাড় বুক ক্যাফে একটি স্বপ্ন নিয়ে গত বছর যাত্রা শুরু করেছিল জেমস আনজুস। এক বছরে অনেক পূর্ণতা পেয়েছে চাঁদের পাহাড় বুক ক্যাফে।
প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা জেমস আনজুস একজন আশাবাদী মানুষ। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক তানজিনা হোসেন, মুম রহমান, কবি সাকিরা পারভিন, কবি পিয়াস মজিদ, নির্মাতা ও অভিনেত্রী লুসি তৃপ্তি গমেজ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চাঁদের পাহাড় বুক ক্যাফের উপদেষ্টা ও গল্পকার খোকন কোড়ায়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদের পাহাড় বুক ক্যাফের প্রতিষ্ঠাতা জেমস আনজুস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আল হাসান।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছবি আঁকা উৎসবে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.