ঢাকার নবাবগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীতে গ্রাম বাংলার শত বছরের ঐতিহ্যে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার নৌকা অংশ গ্রহণ করে। বাইচে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার দত্তখন্ডের ডা. শাহীনের সোনার বাংলা। রানার্সআপও হয় একই উপজেলার হাসনাবাদের মো. কামাল হোসেনের নাফিজ নাইম এক্সপ্রেস । এছাড়া, মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের আলমপুরের সামাদ দেওয়ানের মামা ভাগিনা ৩য় স্থান অর্জন করে। শুক্রবার নবাবগঞ্জ উপজেলার দত্তখন্ড গ্রামবাসীর উদ্যোাগে ও নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির পরিচালনায় এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
পরে শোল্লা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান তুহিনুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং শহীদুল ইসলাম শহীদের সঞ্চালনায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শোল্লা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিসমত।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মো. কামাল হোসেন, নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা, ক্রিড়া সম্পাদক দুলাল দেওয়ান, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সদস্য মোশাররফ হোসেন, আব্দুল খালেক নৌকার মালিক শেখ তুষার আহমেদ।
চ্যান্পিয়ন অর্জনকারী সোনার বাংলাকে একটি মটর সাইকেল, রানারআপ নাফিজ নাঈম এক্সপ্রেসকে ফ্রিজ ও মামা ভাগিনাকে টেলিভিশন দেয়া হয়েছে।
নৌকা বাইচে ৮টি ঘাসী নৌকা অংশ গ্রহণ করে। প্রথম পর্বে টান দেয় সোনার বাংলা বনাম বলধারার ঐতিহ্য। এতে সোনার বাংলা বিজয়ী হয়। নাফিজ নাইম এক্সপ্রেস বনাম গোলাডাঙ্গার নয়নমনি টানে নাফিজ নাইম এক্সপ্রেস জয়ী হয়। মামা ভাগ্নে বনাম শিকদার বাড়ি নৌকার মধ্যে টান দেয়। এতে মামা ভাগ্নে জয়ী হয়। রিফাইতপুর যুব সংঘ বনাম রাজহংসের মধ্যে টান হয়। এতে রিফাইতপুর যুব সংঘ জয়ী হয়। চুড়ান্ত টান দেয় সোনার বাংলা, নাফিজ নাইম এক্সপ্রেস মামা ভাগিনা ও রিফাইতপুর যুব সংঘ। এতে ১ম সোনার বাংলা, ২য় নাফিজ নাইম এক্সপ্রেস, ৩য় মামা ভাগিনা হয়।
মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর ছন্দ মাতিয়ে তোলে কালগঙ্গা নদীর দুই তীর। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার নারী পুরুষ এ দৃশ্য দেখতে ভিড় করে। বাইচে দুপুর থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ভিড় করে। আশেপাশ ও দূর-দূরান্ত থেকে নারী পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ নৌকা বাইচ দেখতে নদীর তীরে জড়ো হন। বাইচে বিভিন্ন এলাকা থেকে সুসজ্জিত ঘাসী নৌকা অংশগ্রহণ করে।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলা উপজেলায় সরকারীভাবে নৌকা বাইচ আয়োজন করার আহ্বান জানান। এটি করতে পারলে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। অন্যথায় নৌকা বাইচ খুব সহসাই বিলুপ্ত ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, একে অপরে বেশ কয়েকটি টান দিয়েছে। আমরা খুব আনন্দ পেয়েছি। এই ঐতিহ্য টিকে থাক আজীবন।
নৌকাবাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, আজ কালিগঙ্গা নদীতে দত্তখন্ড বাসাীর উদ্যোগে এবং নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি পরিচালনায় এ বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। খুব ভালো মতো বাইচ হলো। তিনি বলেন, নবাবাগঞ্জে নৌকাবাইচের ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের। এক দশক আগেও এই অঞ্চলে বিভিন্ন পয়েন্টে পুরো ভাদ্র মাসজুড়ে নৌকা বাইচ হতো। কিন্তু এখন নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ও কচুরিপানার কারণে বাইচে ভাটা পড়েছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে কচুরীপানা থাকায় এ বছর নৌকা বাইচ আয়োজন করা যায়নি ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.