ঢাকার দোহারের লটাখোলার সেই ভন্ড পীর মো. মতিউর রহমান মতির তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। সেইসঙ্গে তার আট সহযোগীকেও এক বছর মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০) ঢাকার ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ এফ এম মারুফ চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন।
দন্ডিত অপর আসামিরা হলো শফিকুল ইসলাাম সেন্টু পীর, মো. শুকুর, লিয়াকত, কাজল, ঝিন্টু, আলমাছ, জুলহাস ও আরিফুল ইসলাম বিদ্যুৎ।
দোহারের লটাখোলায় নিজ আস্তানায় প্রতীকী কাবাঘর বানিয়ে হজব্রত পালন করে মুসলিমদের সঙ্গে প্রতারণা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় ঢাকার দোহারের ‘হজবাবা’ ভন্ড পীর মতিউর রহমানকে তিন বছর ও শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং মো. শুকুর সহ আট সহযোগীকে একবছর করে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং প্রতারণার অভিযোগে মতিউর রহমানসহ নয় জনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর দোহার থানায় মামলাটি দায়ের করেন উপ-পরিদর্শক মো. তছলিম উদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবীর বাবুল প্রিয়বাংলা নিউজ২৪কে বলেন, ‘ভ- পীর মতিউর রহমানকে পৃথক দুই ধারায় তিন বছর ও অপর আসামিদের এক বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। ঝিন্টু ও আরিফুল ইসলাম পলাতক রয়েছে। বাকি আসামিদের সাজা পরোয়ানা ইস্যু করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।’
মামলাটি তদন্ত করে দোহার থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম শেখ ২০১৭ সালের ৩০ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেণ।
উল্লেখ্য যে, দোহারের লটাখোলায় পবিত্র কাবাঘরের অনুকরণে পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট মাপের ছোট্ট একটি ঘর তৈরি করেণ ভন্ড পীর মতি। কালো রঙের কাপড়ে ঢাকা সেই ঘরকে কেন্দ্র করে কয়েকশ নারী-পুরুষ লাইন ধরে হজের পোশাক, সাদা কাফনের কাপড় পড়িয়ে প্রদক্ষিণ করে কথিত হজব্রত পালন করাতেন। তাদের কণ্ঠে থাকত চিরাচরিত হজের সেই আহ্বান ‘আল্লাহুমা লাব্বাইক…’। এসব মানুষও নিজেদের হাজী বলেই মনে করতেন। মতি পীরের আস্তানায় এমনই নিজস্ব তরিকার হজ পালিত হয়ে আসছিল। সর্বশেষ হজ পালিত হয় ৯ সেপ্টেম্বর। ওই হজের দৃশ্যই গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘হজবাবা’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের কয়েকঘন্টার মধ্যে ভন্ড পীর মতির আস্তানা ভেঙে দেয় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারপরই পুলিশ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতের অভিযোগে মতি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
প্রচারিত ওই টেলিভিশিন প্রতিবেদনে হজবাবা মতির নানা কীর্তি উঠে আসে; মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি আর সারা জীবনের পাপমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে পবিত্র মক্কায় হজ পালনে যান বিশ্বের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান। চোখের জলে স্রষ্টাকে স্মরণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন নিজের কৃতকর্মের। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাখো মুসলমান তাওয়াফ করেন পবিত্র কাবাঘর। কিন্তু দোহারের জয়পাড়ায় সেই ‘হজবাবা’ সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর হজ নিয়ে প্রতারণা করে আসছেন বলে প্রতিবেদনে দেখানো হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ হজবাবা প্রতারণার মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে তার ১২ থেকে ১৫টি বাড়ি। জমিজমা রয়েছে অনেক। গড়ে তোলেন ‘লটাখোলা কাদরিয়া পাক দরবার শরীফ, ধ্যান মঞ্জিল’।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.