ভর্তি ফি আদায়ে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার সেন্ট ইউফ্রেজীস গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেন্ট ইউফ্রেজীস গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের শতাধিক অভিভাবক প্রতিষ্ঠানটির সামনে অপেক্ষা করছেন। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন বেতন রশিদ সংগ্রহ করছে। রশিদে জানুয়ারী মাসের বেতন বাবদ ৪৫০ টাকা এবয় ভর্তি বাবদ ৬২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে ৬২০০ টাকা কি কি খাতে নেওয়া হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। জানা যায়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোট ৬৬৫০ টাকা আদায় করছেন বিদ্যালয়টি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলায় ভর্তি ফি বানিজ্যে এবারও এগিয়ে রয়েছে হাসনবাদে অবস্থিত সেন্ট ইউফ্রেজীস গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ। একই উপজেলার খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয় ২০৫০ টাকা, বারুয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় ২২২০ টাকা, কলাকোপা কোকিলপ্যারী উচ্চ বিদ্যালয় ১৭৫০ টাকা ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত আরো কম টাকা নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখানে সেন্ট ইউফ্রেজীস গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ হাতিয়ে নিচ্ছেন ৬৬৫০ টাকা। এছাড়া বান্দুরা হলিক্রশ স্কুল এন্ড কলেজ ভর্তি ফি আদায় করছেন প্রায় ৫ হাজার টাকা। অথচ উপজেলা শিক্ষক সমিতি থেকে ভর্তি ফি ২১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
সোমবার সেন্ট ইউফ্রেজীসের শতাধিক অভিভাবক অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের বিষয়ে অধ্যক্ষের সাথে কথা বলতে এসেছেন বলে জানা যায়। তবে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সিস্টার মেবেল কস্তা অভিভাবকদের সাথে দেখা না করে প্রশাসনের শরণাপন্ন হন। এসময় পুলিশ এসে বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সরিয়ে দেন।
এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিভাবকরা বলেন, আমরা এসেছিলাম বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের সাথে বলতে। কিন্ত তিনি অভিভাবকদের সাথে দেখা না করে উল্টো পুলিশ ডেকে এনে অভিভাবকদের অপমান করেছেন। পরে অভিভাবকরা নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, কেউ কেউ ধারদেনা করে এই টাকা জমা দিয়ে ভর্তি করাতে পারলেও বেশিরভাগই এসব ফি থেকে অব্যাহতি পাওয়া কিংবা কিছুটা কমানোর জন্য ধরনা দিচ্ছেন দ্বারে দ্বারে। অনেক অভিভাবক ফি কমানোর জন্য অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি সাক্ষাৎও দেন না।
হাসনাবাদ গ্রামের কুসলুম বেগম বলেন, আমার স্বামী দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালায়। মেয়ে ৯ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণিতে উঠেছে। নতুন করে ভর্তি হতে হবে এর জন্য সাড়ে ৬ হাজারের উপরে টাকা চাচ্ছে। বাধ্য হয়ে একজনের কাছ থেকে ঋণ করে টাকা আনতে হলো। মেয়েটাকে তো পড়াতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, অনেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরাও এই বিদ্যালয়ে পড়ে। সিস্টারের কাছে টাকা কমাতে গেলে তিনি তো টাকা কমান না উল্টো বাজে কথা বলেন। ভর্তি করাতে না পারলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিন, অন্য স্কুলে ভর্তি করান এমন কথাও শুনতে হয় সিস্টারদের মুখ থেকে।
এক হিসাবে দেখা গেছে বছরের শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে অন্তত অর্ধকোটি কোটি টাকার উপরে। এছাড়া সারা বছর বেতনসহ আনুসাঙ্গিক খরচ তো আছেই। বছরের ১২ মাসই বেতনের সাথে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে, কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিশুরা পাস করার পর স্কুলগুলো যা করছে তা তাদের শিক্ষাজীবনকে ‘জিম্মি’ করে টাকা আদায় ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারি স্কুলে সবাই ভর্তি হতে পারে না। আর এসব স্কুলে ভর্তি করিয়ে অভিভাবকদের বেতন দেয়ার সক্ষমতা থাকলেও বছরের প্রথমে এই গলাকাটা ফি’র রশিদ ধরিয়ে দেয়ার অনৈতিক চর্চা বন্ধ করতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ করা উচিত।
অতিরিক্ত ভর্তি ফি’র ব্যাপারে সেন্ট ইউফ্রেজীস গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার মেবেল কস্তার সাথে যোগাযোগের চেস্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক নুর আলম বলেন, আমি ব্যাপারটা অবগত ছিলাম না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.