1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

ত্রাণ নিয়ে যত ত্রাহি

ইমরান হোসেন সুজন
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০
  • ১২০৩ বার দেখা হয়েছে।

“১৫ দিন পর গাড়ি নিয়ে বাইর হইছি। জমাইনা যে টেকা কয়ডা ছিল তা শ্যাষ। ঘরে মা, বউ ও দুই পোলা। ছোট পোলার বয়স দুই বছর। ওর জন্য দুধ কিনতেই হইব আইজ। তাই বাধ্য হইয়া গাড়ি নিয়া বাইর হইছি।” এমন বক্তব্য নবাবগঞ্জের বান্দুরা এলাকার ইজিবাইক চালক ইয়ারব হোসেনের। কোন ত্রাণ পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জোর গলায় বলেন, “কেউ আমাগো ত্রাণ দেয় নাই, খবরও নেয় নাই।”

দোহারের রিক্সাচালক নোয়াব আলী। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী আর এক সন্তানকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার। সরকারের নির্দেশ মেনে প্রথম ৪/৫ দিন ঘরেই ছিলেন। এরপর শুরু আর্থিক সমস্যা। বাধ্য হয়ে রিক্সা নিয়ে নেমে পড়েন জীবিকার তাগিদে। এখন পর্যন্ত তিনিও কোন ত্রাণ পাননি বলে দাবি করেন। খাদ্য সহায়তা পেলে রিক্সা নিয়ে বের হতেন না বলে জবাব তার।

শুধু ইয়ারব বা নোয়াব আলী নয়। যারা জীবিকার তাগিদে ইজিবাইক বা রিক্সা নিয়ে বাহিরে বের হয়েছে তাদের অধিকাংশের অভিযোগ এখনো কোন খাদ্য সহায়তা বা ত্রাণ পাননি তারা।

দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার একাধিক ইজিবাইক চালক বলেন, আমরা কারো কাছে চাইতেও পারি না। কারন অনেকে বিদেশ থেকে ইজিবাইক চালাচ্ছি। বাড়িতে অনেকের ভাল ঘরও আছে কিন্তু ঘরে খাবার নেই। যদি সরকারি বা বেসরকারি সহায়তাই পেতাম তাহলে কি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাহিরে কি বের হতাম? সবারই তো জীবনের মায়া আছে। আমরাও দেখছি ত্রাণের বস্তা এদিক-সেদিক যাচ্ছে। আমাদের ইজিবাইকেও যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না ত্রাণগুলো পাচ্ছে কে? তারা বলেন, দোহার নবাবগঞ্জে ইজিবাইক ও রিক্সা চালকদের তালিকা করে ত্রাণ দেয়া হলে আমরাও বুঝতে পারতাম।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঘুরে ফিরে ত্রাণগুলো সমাজের একেবারে নিম্মআয়ের ব্যক্তিরাই পাচ্ছেন। যারা পাচ্ছেন তারা এ বাড়ি সে বাড়ি বা চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে ধন্যা দিয়ে ত্রাণের বস্তা এনে ঘরে জমা করে রাখছেন। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে যারা ত্রাণ বিতরণ করছে তাদের সহায়তাও পাচ্ছেন নিম্মবিত্তরা। অর্থাৎ কিছু মানুষের মাঝে সীমাবদ্ধ রয়েছে ত্রাণ সহায়তাগুলো।
সরকারি ত্রাণ বন্টনে রয়েছে নানা অভিযোগ। বেশিরভাগ ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। দেখা যায়, যে পরিবার সহায়তা পাচ্ছে তারাই ঘুরে ফিরে সহায়তাগুলো পাচ্ছে। বক্তিগত উদ্যোগে যারা সহায়তা করছেন তারাও নিম্মবিত্তদের সহযেগিতা করছে। অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছে মধ্যবিত্তরা।

ইতিমধ্যে মধ্যবিত্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। মধ্যবিত্তরা ফোন দিলে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। কিন্তু সেক্ষেত্রে মধ্যবিত্তদের তালিকাও ছিল দীর্ঘ। কোন সংগঠন বা ব্যক্তির পক্ষে এত মানুষকে সহায়তা করা প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি পরিবারেই অভিযোগ তারা কোন সহায়তা পাচ্ছে না। অন্যদিকে সহায়তা পাচ্ছে না এমন অভিযোগ নিম্মবিত্তদেরও। তাহলে প্রশ্ন ত্রাণগুলো পাচ্ছে কে?

সুশীল সমাজ মনে করছে, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় সুষম বন্টন। দেশের এমন দুর্যোগে উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সমাজপতিদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কর্মহীন নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে হবে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সমাজপতিদের সম্পৃক্ত করে। এভাবে তালিকা করলে ওয়ার্ডের প্রতিটা অসহায় মানুষের নাম তালিকাবদ্ধ হবে। সেই সাথে সরকারের পাশাপাশি যারা ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করবে তাদেরকেও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় খাদ্য সামগ্রী সুষম বন্টনের পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব।

এখান থেকে আপনার সোস্যাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

ক্যাটাগরির আরো খবর