প্রথমে একজন পেছন থেকে মুখ চেপে ধরেন। এরপর পাঁচজন মিলে হাত পা বাঁধেন। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয় দুই হাতের তালু। একটি বস্তা ভরে চালানো হয় শারিরীক নির্যাতন। পরিকল্পনা করা হয় রাত দুইটায় হত্যা করে গুম করা হবে লাশ। তবে ভাগ্যগুণে বেঁচে গেলেও এখনো আতঙ্ক কাটেনি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নুরনগর গ্রামের বাসিন্দা স্কুলছাত্রী নিছা আক্তারের। মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখায় মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছে নিছা। আতঙ্কে রয়েছে পরিবারটিও।
এঘটনায় স্কুলছাত্রীর নানা আব্দুল মালেক বেপারী প্রতিবেশি সামসুন্নাহার গংদের বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেছে। তবে এখনো কোন আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন পরিবারটি। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে।
কি ঘটেছিল সেদিন:
আসলে কি ঘটেছিল সেদিন। এমন প্রশ্ন অনেকের। নিছা কিছুটা সুস্থ হয়ে এখন বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রিয়বাংলা নিউজ২৪’কে নিছা খুঁলে বলেছেন সেদিন ঘটনা। তার ভাষ্য হুবাহু তুলে ধরা হলো:
১৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা তখন সারে ৬টা বা পৌনে ৭টা। আমি পড়তে বসেছিলাম। তখন আমার কলমের খালি শেষ হয়ে যায়। আমি আমার মেঝ মামির ঘর থেকে কলম আনার জন্য আমাদের ঘর থেকে বের হই। তখন ঘরের বাহিরে অন্ধকার ছিল। বের হয়ে আমি জুতা খুঁজতেছিলাম। হঠাৎ একজন পুরুষ পেছন দিক থেকে আমার মুখ চেপে ধরছে। তাকে আমি অন্ধকারে দেখি নাই। এসময় সালমা আক্তার আমার পা ধরছে, তাকে আমি চিনতে পেরেছি। তারা ধরে যখন আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি মামী বলে চিৎকার দেই। সঙ্গে সঙ্গে তারা ওড়না দিয়ে আমার মুখ বেঁধে ফেলে। আামাকে জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। এসময় সালমার মা সামসুন্নাহারও আমাকে জাপটে ধরে। ভিতরে নেওয়ার পর সেখানে আরো দুইজন ছিল। রশি দিয়ে চায়না ও আরো একজন আমার পা বেঁধে ফেলে। তখন সামসুন্নাহার আমার হাত কাটে আর বলে ওকে (নিছার ছোট মামীকে) তো পাইলাম না, এখন ওকেই শেষ করবো। মারতে চাইছিল আমার ছোট মামীকে। হাত কাটার পর আমাকে শক্ত করে বেঁধে বস্তায় ভরে অনেক মারধর করেছে করেছে। যতক্ষণ জ্ঞান ছিল ওরা আমাকে মেরেছে’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নার ভেঙে পড়েন নিছা।
এরপরের ঘটনা আরো ভয়ংকর। কিছুটা থেমে নিছা বলতে থাকেন তার পরের ঘটনা। ‘ বস্তায় ভিতরেই বারবার মারধর করতে থাকে আমাকে। এরপর ওরা আমাকে জবাই করতে চাইছিল। তখন একটা ফোন আসে ওদের মোবাইলে। এপাশ থেকে বলে ‘হ্যা, ভাই বলেন? তখন ফোনে লাউড স্পিকার দেওয়া ছিল। মোবাইলের ঐ পাশ থেকে লোকটা বলে, এখন না রাত দুইটার সময় আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিব। ওর কাজ শেষ করে ফেলো, ওকে জবাই করে,,,” এরপর আর আমি জানি না। জবাই করার কথা শুনেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
এসময় নিছা আরো বলেন, যখন আমাকে বস্তায় ভরা হয় তখন আমার আর বেঁচে থাকার আশা ছিল না। আর যখন শুনলাম জবাই করা হবে, তখন আমি আর জানি না আমি কোন দুনিয়ায় ছিলাম। আমি এখন ঘুমাতে পারি না, ঘুমালেই মনে হয় ওরা আমাকে জবাই করে ফেলবে। আমি ওদের বিচার চাই।
নিছার মেঝ মামী জানান, আগেরদিন ওরা নিছাকে মারধর করেছিল। যখন নিছাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন স্থানীয়দের সহযোগিতায় সামসুন্নাহারদের রান্নাঘর থেকে হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসা নিয়ে বাসা এলেও আতঙ্কে এখনো নির্ঘুম রাত কাটে নিছার। তাদের সাথে সামসুন্নাহারদের কিছু বিরোধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নবাবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মৃত্যুঞ্জয় কির্তুনীয়া জানান, আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত সামসুন্নাহার গংদের বাসায় গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.