আমাগো তো পেটআছে। কেউ তো এক কেজি চাইলও দেয় না। খাবার না দিয়ে লকডাউন দিলে কি অইবো, আমাগো পোলাপান নিয়া তো বাঁচতে অইবো। তাইলে আমরা ক্যামনে বাচুম। আক্ষেপের স্বরে কথাগুলো বলছিলেন রিক্সাচালক জাহাঙ্গীর।
তপ্ত রোদ। চারপাশ অনেকটা জনশূন্য। সড়কে তেমন মানুষজন নেই। কিছুক্ষন পর পর পুলিশের টহল চলছে। পুলিশ দেখলেই রিক্সা নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছেন।
মধ্যবয়সী রিক্সাচালক মো. জাহাঙ্গীর । ১২ বছর ধরে রিক্সার চাকার সাথে তার সংসারের চাকা ঘুরে। বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী গ্রামে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। রিক্সা চালিয়ে কোন রকম সংসার চালিয়ে বেঁচে থাকলেও লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন। সকালে বের হয়েও দুপুর পর্যন্ত ইনকাম করেছেন ২৭০ টাকা। স্বাভাবিক দিনগুলোতে ৪০০/৪৫০ টাকা হয়ে যেতো দুপুরের মধ্যে। এখনও দুপুরের খাবার খাওয়া হয়নি তার। রিক্সার জমা আর বিদ্যুৎ বিল যোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। সব মিলিয়ে চোঁখে মুখে হতাশা। কারন লকডাউনে সকালে একটু যাত্রী পাওয়া গেলেও দুপুরের পর যাত্রীই পাওয়া যায় না।
লকডাউনে বের হয়েছেন কেন? এমন প্রশ্ন করতেই জাহাঙ্গীর বলে উঠেন, বাবা খামু কী? সরকার তো ভালোর জন্য লকডাউন দিছে। আমাগো তো পেট আছে। পোলাপান নিয়া বাচুম কেমনে? কেউ তো এক কেজি চাইলও দেয়। সরকার তো আমাগো দুই চারয়ানা দিবো না। খাওনও দিবো না। তাইলে আমরা কি খাইয়া বাচুম। ৫/৬ জন মানুষ আমাগো বাড়ি। পুলিশ তো ধাওয়া দিতেই থাকে। এইডার মধ্যেই চুরি চামারী কইরা রিক্সাডা নিয়া বাইর অই। রিক্সাডার উপরেই ভরসা কইরা বাইচা আছি। কয়দিন পরপরই লকডাউন দেয়। আমাগো পেটে খাইবার থাকে না। ঘরে থাকে না চাইল। একদিন না বাইরাইলে ছেলে সন্তান না খাইয়া থাকে। কেউ তো বলে না যে তোমরা বাচ্চা কাচ্চা নিয়া বাসায় বইসা থাইকা খাও। রাইত পোহালেই বাচ্চারা কান্দা কাটি করে। পেটের দায়ে আমাগো রিক্সা নিয়া রাস্তায় নামুন লাগে। আমাগো খবর কেউ নেয় না। একাধারে কথাগুলো বলতে থাকেন জাহাঙ্গীর।
বান্দুরা এলাকায় কথা হয় ইজিবাইক চালক মুন্না মোল্লার সাথে। তিনি বলেন, লকডাউন তো দিছে ভালোর লিগা। আমাগো তো পেটের জ্বালায় রাস্তায় আইছি গাড়ি নিয়া। লোক পাই আর না পাই পুলিশের দাবার তো ঠিকই খাইতে অয়। সব কিছু মাইনা নিয়াই বাইচা থাকার লিগা আমরা গাড়ি নিয়া আহি। কয়দিন পর পর লকডাউন। গরিবের কি লকডাউনে বাউচা থাকা সম্ভব। ঘরে বইসা থাকলে পোলাপান নিয়া কেমনে বাচুম।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.