1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে সফল দেলোয়ার

শামীম হোসেন সামন। নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
  • আপডেট : শনিবার, ১ মে, ২০২১
  • ৬৫১ বার দেখা হয়েছে

নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বিদেশ ফেরত দেলোয়ার হোসেন। উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের বলমন্তচর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীতে ভাসমান খাঁচায় নিজ উদ্যোগে মাছের চাষ শুরু করেন দেলোয়ার হোসেন। প্রথম দিকে ইছামতী নদীতে নেটের (জাল) সাহায্যে তৈরি দুইটি খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ দিয়ে শুরু করেন ভাসমান খাঁচায় মৎস্য চাষ। এরপর নানা প্রতিবন্ধকতার পরও কঠোর পরিশ্রমের কারনে পেয়েছেন সফলতা। সফল মৎস চাষি হিসেবে দুইবার জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

জানা যায়, জীবনের তাগিদে ও পরিবারের সুখের কথা ভেবে এক সময় পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে যদিও তিনি ভালো ছিলেন তবুও নিজের দেশে কিছু একটা করার স্বপ্ন তার। সেই স্বপ্ন নিয়ে তিনি ২০১০ সালে ফিরে আসেন নিজ দেশে। তবে দেশে এসে কিছু করতে না পেরে হতাশা আর দুশ্চিন্তা নিয়ে দিনগুলো যখন বিষন্ন ঠিক তখনই মনস্থির করলেন মাছ চাষ করার। এরপর মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন ভাসমান খাঁচায় মাছ। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উৎসাহ দিলেন তাকে। তাদের সার্বিক তত্বাবধায়ন ও পরামর্শে শুরু করেন খাঁচায় মাছ চাষ। প্রথম দিকে নিজ উদ্যোগে নদীতে খাঁচা স্থাপন করেছেন তিনি। পরে সরকারিভাবে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকেও খাঁচা দেওয়া হয় তাকে। এরপর তিনি লাভবানও হয়েছেন বেশ। ভাগ্য বদলেছে স্বপ্নবাজ এই উদ্যোক্তা। কঠোর পরিশ্রমী হওয়ায় তিনি দুইবার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।

মাত্র দুইটি খাঁচা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে ৬০টি খাঁচায়ই তেলাপিয়ার চাষ করেন এক তিনি। বাড়তে থাকে তার প্রকল্পের পরিধি। তবে ইছামতি নদীর নাম্যতার কারনে বর্তমানে নদীতে পানির অভাব থাকায় বর্তমানে মাত্র ২২টি খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ করছেন। তার সাফল্যে অনুপ্রানিত হয়ে এখন অনেকেই খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেকারত্ব ঘোঁচাতে এলাকার যুবকরা নদী পাড়ে নেট দিয়ে ছোট ছোট মাছের প্রকল্প গড়ে তুলছেন। খুব অল্প সময়ে প্রাকৃতিক উপায়ে বিক্রির উপযোগী হয় এসব মাছ।

সরেজমিনে উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের বলমন্তচর গ্রামের ইছামতী নদীর পাড়ে দেলোয়ারের মাছের খামারে গিয়ে দেখা যায়, ২২টি খাচাঁয় তেলাপিয়া মাছ চাষ করছেন। খাঁচার চারপাশে লোহারপাইপ, বাঁশ ও ড্রাম দিয়ে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ১০ ফুট বাই ২০ ফুটের খাঁচাগুলোর গভীর রয়েছে ৮ ফুট। সার্বক্ষনিক থাকা ও মাছের খাবার, নেট ইত্যাদি রাখার জন্য নদীপাড়ে একটি ঘর তৈরি করেছেন। দেলোয়ারকে দেখা যায় নৌকায় করে মাছের খাবার দিচ্ছেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠা এসব মাছের রোগ-বালাই হয়না। তাই কোন মেডিসিন প্রয়োগ নেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রি করা যায়। পুকুর বা ঘেরে একটি তেলাপিয়া মাছ এক কেজি হতে সময় নেয় ৬ থেকে ৭ মাস, আর নদীতে খাঁচায় তেলাপিয়া কেজি হয় ৩ থেকে ৪ মাসে। প্রতি ৩ মাস পর পর মাছ বিক্রি করা যায়।’

স্থানীয় যুবক সালমান আহমেদ বলেন, ‘দেলোয়ার যেভাবে পরিশ্রম করে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন, তা সকলের জন্য অনুকরনীয়। সে সারারাত জেগে মাছের প্রকল্প পাহারা দেয়। কাজের প্রতি ভালোবাসাও সম্মান রয়েছে বলে আজ সফলতা ধরা দিয়েছে তাকে।’

এব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয়াংকা সাহা বলেন, ‘দেলোয়ার একজন পরিশ্রমী ও স্বপ্নবাজ মানুষ। তাকে প্রথম বলার পর সে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। তাকে দেখে এখন অনেক খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছে। দলোয়ার খাঁচায় মাছ চাষের সাথে তার পারিবারিক উন্নতি ও নিজ আত্মকর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করেছেন।’

মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেলোয়ারসহ সকল মৎসচাষিরে সব ধরনের পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রিয়াংকা সাহা।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ