1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন

বাপ দাদার পেশা ছাড়ছেন নবাবগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা

শামীম হোসেন সামন, নবাবগঞ্জঃ
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৩৯৫ বার দেখা হয়েছে।

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় বিলুপ্তির পথে বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। কালের বিবর্তন আর শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প। এই উপজেলায় বংশ পরম্পরায় এখনও মৃৎশিল্পকে আকঁড়ে ধরে বেঁচে আছেন অনেক পরিবার। তবে প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দাপটে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছেন অনেকে। হারাতে বসেছে হাজার বছরের ঐতিহ্যের এই শিল্প।

প্রতিবছর দুর্গাপূজা, পহেলা বৈশাখসহ, বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে এর কদর বাড়ে। ফলে এ সময়গুলোতে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখেন কারিগররা। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কম থাকায় বেচা-বিক্রি করতে না পারায় অর্থনৈতিক সংকটে দিশেহারা এই শিল্পের সাথে জড়িতরা ।

কিন্তু কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এই শিল্পের প্রসার। অনেকে এ পেশায় থাকলেও মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা না থাকায় অভাব-অনটনে সংসার চালাতে পারছেন না তারা। একবেলা আধবেলা খেয়ে দিনানিপাত করছেন অনেক মৃৎশিল্পী। এক সময়ের কর্মব্যস্ত কুমারপাড়ায় এখন শুনসান নিরবতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মৃৎশিল্প ছিল। মৃৎশিল্পীরা মাটির হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন, ঢাকনা, কলসি, ছোট বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী, পেয়ালা তৈরি করত। তাঁদের তৈরি পুতুল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে নানা প্রতিকূলতা ও অভাব অনটনের কারণে মৃৎশিল্পীরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সোনাবাজু এলাকার প্রবীণ শিল্পী মরন পাল জানান, ‘খুব ছোটবেলা থেকে এই মৃৎশিল্পে জড়িত ছিলাম। বয়সের ভারে ও আধুনিকতায় আমার পেশা থেকে সরে দাঁড়ালে ও ছেলে তার পূর্ব বংশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো এ পেশায় জড়িয়ে রয়েছে। তবে আগে যে হারে এসব জিনিসপত্র ব্যবহার করতো মানুষ আর বর্তমানে সেভাবে মানুষ এসব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাতে ঋণ করে সংসার চালাতে হবে।’

অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী এ মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ শিল্পের।

খানেপুর গ্রামের নারায়ণ পাল বলেন, ‘একসময় বাপ দাদার পেশায় ভালো ছিলাম। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের এখন কদর নেই। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, নানামুখী সংকটের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। ফলে এর ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। স্টিল, চিনামাটি, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসার পর মানুষ আর মাটির তৈরি হাঁড়ি, থালা, কলস, মসলা বাটার পাত্র, মাটির ব্যাংক ও খেলনা সামগ্রী ব্যবহার করছেন না। এখন শুধু গবাদিপশুর খাবারের জন্য গামলা, মাটির ব্যাংক, মাটির পাতিল ও সংখ্যালঘুদের পূজা-পার্বণের জন্য নির্মিত কিছু সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ অবশ্য এখনও দৈনন্দিন প্রয়োজনে কিছু মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করেন। কিন্তু মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্রের বাজার চাহিদা তেমন একটা নেই বললেই চলে। এক সময় কম দামে মাটি সংগ্রহ করা গেলেও এখন মাটি কিনতে হয় অনেক বেশি দামে। এছাড়া মাটি ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। ফলে কুমার সম্প্রদায়ের সদস্যরা বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক মৃৎশিল্প। এ দেশের কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে টিকিয়ে রেখেছে। এ শিল্পের মালামাল, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সরবরাহ করা হতো। তাই বাংলার এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন এ পেশায় জড়িতরা।

এখান থেকে আপনার সোস্যাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

ক্যাটাগরির আরো খবর