1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

নবাবগঞ্জে করোনার মাঝেই ডেঙ্গুর হানা

ইমরান হোসেন সুজন.
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১
  • ৬৬৮ বার দেখা হয়েছে।

সারা দেশের তুলনায় এখনও ঢাকার নবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণের হার বেশি। গতকাল যেখানে দেশে সংক্রমণ হার ছিল ১২.৭৮ শতাংশ, সেখানে নবাবগঞ্জে সবশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে (২৫ ও ২৬ আগস্টের রিপোর্টে) সংক্রমণের হার দ্বিগুণ প্রায় ২৬.৪ শতাংশ। করোনার মহামারীর মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক। করোনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। চলমান করোনা দুর্যোগের মধ্যে উপজেলায় প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়ায় তাদের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিল। এখনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়া ১৬ আগস্ট শোল্লা ইউনিয়নের সিংহড়া গ্রামের হাফেজ নামে এক ব্যক্তি ডেঙ্গু ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা শতাধিকের উপরে। সম্প্রতি উপজেলার সদর কলাকোপা ইউনিয়নের কাশিমপুর, বান্দুরা ইউনিয়নের হাসনাবাদ, মাঝিরকান্দা, নয়নশ্রী ইউনিয়নের নতুন তুইতাল, গালিমপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হাসনাবাদ এলাকার সাগর গমেজ বলেন, আমি গত ৬ মাসেও এলাকার বাহিরে ঢাকা যাইনি। কিন্তু কয়েক দিন পূর্বে আমার হঠাৎ প্রচন্ড জ্বর, শরীর ব্যথাসহ বিভিন্ন সমস্যায় দেখা দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শে করোনা ও ডেঙ্গ জ্বরের পরীক্ষা করলে করোনা নিগেটিভ ও ডেঙ্গু পজেটিভ শনাক্ত হয়।

গালিমপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুরে বাসিন্দা রোমান বলেন, আমি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলাম। এখন সুস্থ। এলাকায় এত মশা যে ডেঙ্গু হওয়া স্বাভাবিক। মশা মারার জন্য কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এতে ডেঙ্গ আরো ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।

সিংগাইরের শুভ নামে এক যুবক বলেন, আমার মা ডেঙ্গুতে আকান্ত হলে আমি তাকে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। গ্রাম থেকেই মা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ওনি তো অনেকদিন হয় ঢাকা যায়নি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম জানান, করোনা রোগীদের জরুরী চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে আমরা ডেঙ্গুর বিষয়ে ভাবনার সময় পাইনি। ডেঙ্গু রোগী নবাবগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে পাওয়া যাচ্ছে। করোনা ও ডেঙ্গু রোগীদের উপসর্গ প্রায় একই। ভয় না পেয়ে সাথে সাথে রক্ত পরীক্ষা করানো এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক, ওষুধ, নার্স, ওয়ার্ড সহ সকল প্রকার প্রস্তৃতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

এই ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু রোগটি শহর কেন্দ্রিক হলেও বর্তমানে গ্রামের মানুষও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি আমাদের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামে বাঁশের যে কাটা অংশ সেখানে পানি জমে সেখানে এবং গাছের গর্তে আমরা এডিস মশার লাভা পেয়েছি। গরুকে যে পাত্রে খাবার খাওয়ানো হয়, সে ধরনের ভাঙা পাত্রে আমরা এডিস মশা দেখিছি। এছাড়া বাড়ির আশেপাশে যে পাত্র পড়ে থাকে, তার মধ্যে পানি জমা হয় সেখানে এডিস মশার উপস্থিত পাওয়া গেছে। আমাদের সকলের সম্মেলিত প্রয়াস ও সচেতনতা সকলকে ডেঙ্গু থেকে মুক্ত রাখতে পারে। বাড়ির চারপাশে পরিস্কার রাখতে হবে। কোন পাত্রে পানি জমা থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। গাছের গর্ত ও বাঁশের কাটা অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে।

নবাবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও করোনা ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এইচ এম সালাউদ্দীন মনজু বলেন, আমরা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বিষয়ে বিশেষ নজরদারি করছি। প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া আছে তারা যেন ফগার মেশিন দিয়ে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ওষুধ ছিটানো হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের পাশাপাশি, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত আছে।

এখান থেকে আপনার সোস্যাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

ক্যাটাগরির আরো খবর