1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
July 27, 2024, 12:54 am

২০ বছর শেকলবন্দী মেধাবী নজরুল!

ইমরান হোসেন সুজন:
  • Update Time : Thursday, June 24, 2021
  • 2382 Time View

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নতুন বান্দুরা গ্রামের নজরুল ইসলাম। ২০ বছর ধরে শেকলের সাথে তাঁর বাস। ২০ বছর আগেও স্বাভাবিক ছিল নজরুলের জীবন। বর্তমানে নজরুলের বয়স ৪০ বছর। অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া ছেলেটি পড়াশোনায় ছিলেন অদম্য মেধাবী। শুধু তাই নয়, ছিলেন কুরআনে হাফেজও। স্পষ্ট ভাষায় তাঁর সুমধুর কন্ঠের আযান আর কুরআন তেলোয়াত মুগ্ধ করত এলাকাবাসীকে।

এলাকাবাসী জানান, স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় নজরুল ভালবেসে ছিলেন প্রতিবেশী এক মেয়েকে। তবে দুই পরিবারের মতের অমিল থাকায় সে সম্পর্ক গড়ায়নি বিয়ে পর্যন্ত। কিছুদিন পরই অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায় মেয়েটির। ওই বিয়ের পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। ভুলে থাকার সহজ সমাধান খুঁজতে আসক্ত হয়ে পড়েন নেশায়। তখন পারিপার্শ্বিক নানা মানসিক চাপের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও চলে নজরুলের উপর। পুরোপুরিভাবে হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। তারপর থেকেই শেকলে বাঁধা পড়ে মেধাবী নজরুলের জীবন। ২০ বছর আগেও স্বাভাবিক ছিল নজরুলের জীবন। বর্তমানে নজরুলের বয়স ৪০ বছর। অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া ছেলেটি পড়াশোনায় ছিলেন অদম্য মেধাবী। শুধু তাই নয়, ছিলেন কুরআনে হাফেজও। স্পষ্ট ভাষায় তাঁর সুমধুর কন্ঠের আযান আর কুরআন তেলোয়াত মুগ্ধ করত এলাকাবাসীকে।

২০০১ সালের পর নতুন আর কোন ক্ষণ যুক্ত হয়নি নজরুলের স্মৃতিতে। যে কারণে ২০ বছরের আগের স্মৃতিতেই থমকে আছেন নজরুল। অসচ্ছল পরিবার চিকিৎসা করতে না পারায় ভাঙাচোরা একটি ঘরে শেকলে বন্দী এখন তাঁর জীবন।

সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙাচোরা টিনের-চালা একটি ঘরের বারান্দায় শেকল পায়ে মাটিতে বসে আছে নজরুল। শরীরে শুধু প্যান্ট ছাড়া আর কোনো কাপড় নেই। শেকল পরা অবস্থায় ঘরের ভেতরেই নজরুলের গোসল ও পয়ঃনিস্কাশনের জন্য একটা গর্ত করে দেওয়া হয়েছে। তবে ঘরটি কাঁচা হওয়ায় গোসলের পর পুরো ঘর কাঁদা হয়ে যায়। এছাড়া ঘরটি ভাঙা হওয়ায় শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট করতে হয় নজরুলকে।

দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নজরুল দ্বিতীয়। বাবা আয়নাল দেওয়ান ও মা নবীজা বেগম ছেলের চিকিৎসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত। তবে সুফল মেলেনি কোনো। তাঁরা মারা যাবার পর মানসিক ভারসাম্যহীন নজরুলের দায়িত্ব বর্তায় দুই বোনের উপর। ইচ্ছা থাকার পরও আর্থিক সংকটে তাঁর উন্নত চিকিৎসার ভার নিতে পারছেনা পরিবারটি।

নজরুলের বড় বোন কোহিনুর বেগম বলেন, অর্থের অভাবে পুরোপুরিভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে তার ভাইকে শেকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। আমার মেয়ে আঁখি এখন তার মামার দেখাশুনা করেন। সরকারিভাবে আমাদের কোনো ভাতাও দেওয়া হচ্ছে না। তিনি সরকারি সহায়তা চান ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য।

নজরুলের দুলাভাই মো. আবজাল বলেন, আর্থক সঙ্গতি না থাকায় নজরুলের চিকিৎসার জন্য তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

নজরুলের ছোট বোন শাহিনুর বেগম বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। বাবাও মইরা গেছে অনেক আগে। মা পাগল ভাইটারে নিয়া অনেক কস্ট করছে। মাইনষের বাড়ি বাড়ি কাজ কইরা ভাইয়ের চিকিৎসা করাইছে। দুই মাস আগেও মা’ডাও মইরা গেল। ভাইরে কে দেখবে, ওর যে কি হইব আল্লায় জানে।”
নজরুলের খালা খোদেজা বেগম জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় নজরুল প্রতিনিয়ত বিভিন্নজনকে মারধর ও বিরক্ত করত, নেশা করে বেড়াতো। অর্থাভাবে তার পুরোপুরি চিকিৎসা করানোও সম্ভব হয়ে উঠেনি। ওর যন্ত্রণার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০ বছর আগে পায়ে লোহার শেকল পরিয়ে ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে মাঝে একবার কিছুটা সুস্থ হয়ে কাজও করেছে। কিছূদিন পর আবারো পাগল হয়ে যাওয়ায় শেকলবন্দী করা হয়েছে। এমনকি নিজের পরিবারের লোকজনদের কাছে পেলেও সে আঘাত করার চেষ্টা করে। এ জন্যই পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে।

২০ বছরেও নজরুলের দ্বারে পৌঁছায়নি প্রতিবন্ধী ভাতা বা সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা। ভাঙচোরা একটি ঘরে অমানবিক জীবন ধারণ করা আর খেয়ে না খেয়ে দিন পার করা পরিবারটি এখন কি করবে সেই ভেবে দিশেহারা পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরাও।

নবাবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, পুরোপুরি পাগল হলে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার সুযোগ নেই।

তবে পরিবারের আশা, সুচিকিৎসা পেলে হয়তো স্বাভাবিক হবে নজরুলের জীবন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category