1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
July 27, 2024, 3:56 am

মধু চাষে নবাবগঞ্জের শরীফের স্বপ্নপূরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : Tuesday, February 7, 2023
  • 428 Time View

করো স্বপ্ন আকাশে করো স্বপ্ন মাটিতে। ৫ তারকা হোটেলে চাকরির সুযোগ ছেড়ে মাটির কাছাকাছি এসে স্বপ্নপূরণে কাজ করছে ঢাকা নবাবগঞ্জ উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোগতা মো: রুকন উজ্জামান শরীফ তানভীর (৩৩)।

২০১৪ তে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ডিপ্লোমা করে চাকরি হয় ৩ তারকা বিশিষ্ট হোটেল ওয়াশিংটনে। হাতছানি ছিলো ৫ তারকা বিশিষ্ট হোটেল চাকরির। সবে মাত্র যেখানে কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট সেখানে এক বিদেশীর উৎসাহে কৃষিতে কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন শরীফ। ২০০৯ সালে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র দুইটি বক্স দিয়ে মধুন চাষ শুরু করেন শরীফ। মাঝে কিছুদিন চাকরি করে মাটির টানে আবার ফিরে আসে নিজের শিকড় মধু চাষে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা ইউনিয়নের টিকরপুর চকে সরিষা ক্ষেতের পাশে বসানো বক্স থেকে মধু আহরণ করছেন শরীফ। মাঝে ৫০ বক্স থাকলেও শ্রমশক্তির অভাব ও রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলার কারণে বর্তমানে ১২টি বক্স থেকে শুধু সরিষার মৌসুমে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি মধু আহরণ করেন তিনি।

শরীফ বলেন, ২০০৯ থেকে ২ বক্স দিয়ে শুরু ২০১৪ তে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স করে হোটেল ওয়াশিংটনে জব করতাম। সেখানে এক বিদেশি আমাকে বলে তুমি তোমার নিজের দেশের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করো। এতে করে তুমি তোমার দেশের অর্থ দেশেই ব্যয় করতে পারছো। মূলত আমার ইচ্ছে ছিলো তিন তারকা থেকে শুরু করে ৫ তারকা হোটেলে জব করবো। কিন্তু ফরেনারের কথা আমার ভিতরে প্রভাব ফেলে।

তখন থেকে আমি আমার নিজের দেশি প্রোডাক্ট কৃষিতে ফিরে আসি। কৃষির নানা দিকের মধ্যে আমার মধু চাষ, পরে গবাদি পশুর গরুর খামার করি।

প্রথম দিকে আমি নানা রকম সমস্যায় পড়ি। মৌমাছি কিভাবে মধু সংগ্রহ করে তার কাছ থেকে আমি কিভাবে মধু সংগ্রহ করব এই বিষয়গুলো নিয়ে জটিলতার সম্মুখীন হই। এ বিষয়ে নানাভাবে স্টাডি করতে থাকি কৃষি অফিসের সহায়তা নেই।

মৌমাছি মূলত ফুলের রেণু ও ফলের রস খাবার হিসেবে সংগ্রহ করে। সে খাবার থেকে কিছু সে মজুদ করে। সেই মজুদকৃত ফুলের রস বা রেনু পরবর্তীতে মধু রূপান্তরিত হয়। মৌমাছির সংরক্ষিত মধু প্রথমে পাতলা থাকে পর্যায়ক্রমে তা ঘন হয়ে এ গ্রেডের মধুতে রূপ নেয়। এই মধু সংগ্রহের জন্য আমি প্রথম দিকে বাড়ির আশেপাশে সরিষা ক্ষেতের পাশে আমার মৌমাছির বক্স বসিয়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেখানেই মৌমাছি গুলোকে অবস্থান করাই। শ্রমিক মৌমাছি প্রতিদিন সরিষা ক্ষেত থেকে সরিষা ফুলের রেণু ও রস সংগ্রহ করে বক্সে সংরক্ষণ করে। পরে কয়েক দিন অন্তর অন্তর মধু বক্স থেকে তুলে বাজারজাত করি।

শরীফ সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণার বিষয়ে উল্লেখ্য করে বলেন, চাষের মধু ও চাকের মধুর মধ্যে মূলত স্বাদ ছাড়া কোনো পার্থক্য নেই। চাকের মৌমাছিগুলো বিভিন্ন ফুল ফল থেকে রেনু, রস সংগ্রহ করে আর চাষের ক্ষেত্রে শুধু একটি ফুল ফলের রস সংগ্রহ করে তাই স্বাদ ভিন্ন হয়ে থেকে। এ ছাড়া গুণগতমানের দিন দিয়ে কোনো তফাৎ নাই।

তিনি আরো বলেন, নিজেকে ওয়েল স্টাবলিস্ট বলবো না তবে বর্তমানে শুধু মধু থেকে আমার পরিবারের ব্যয়ের ৭০ শতাংশ উপার্জন করি। বাকি গবাদি পশুর খামার থেকে ব্যয় নির্বাহ করি। নিজের দেশের পণ্য নিয়ে কাজ করে যা আয় হয় এতে আমি সন্তুষ্ট আলহামদুলিল্লাহ।

শুরুতে শরীফের নিকটজনরা চাকরি ছাড়াকে পাগলামি বললেও তার পরিশ্রমের ফল পাওয়া তে খুশি আপনজনেরা।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামন বলেন, শরীফ অত্যান্ত পরিশ্রমী একটা ছেলে।তিনি দীর্ঘদিন মধু চাষ করে আসছে। কৃষি অফিস থেকে আমরা তাকে বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও অন্যান্য সুবিধা প্রধান করেছি। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা দুইটি মধু চাষের বক্স দিয়েছি। শরীফের মত তরুণ মধু চাষীদের কারণে উপজেলার সরিষা চাষে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন উপজেলার এই কৃষি কর্মকর্তা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category