যুগোপযোগী পরিবেশ ও আবহাওয়ার কারনে মাশরুম চাষে ঢাকার নবাবগঞ্জে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঔষধি গুণসম্পন্ন এ খাবারটির চাহিদাও বাড়ছে ব্যাপক হারে। অথচ এখনও চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম। উৎপাদন বাড়ানো গেলে অর্থনৈতিক সাফল্য নিশ্চিত। ফলে মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে। আগ্রহ আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোড়ে মাশরুম চাষ শুরুর এক বছরের মধ্যেই তেমনই এক সফল চাষী ও উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের উত্তর বাহ্রা গ্রামে শাহিন মোল্লা।
‘সাভার মাশরুম উন্নয়ন সেন্টার’ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২০ সালে শুরু করেন মাশরুম চাষ। শুরুতে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বীজ ক্রয় করে মাশরুম চাষ করলেও বর্তমানে নিজেই বীজ তৈরি করে চাষের পাশাপাশি বিক্রি করা শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে মাশরুমের পাশাপাশি বীজেরও চাহিদা বেড়েছে। সরকারি সহায়তা পেলে মাশরুম চাষ করে বেকার সমস্যা দূর করার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।
মাশরুম চাষি শাহিন মোল্লা আরও জানান, বর্তমানে মাশরুম চাষ করে তিনি সব খরচ বাদ দিয়ে ভালো টাকা আয় করতে পারছেন। প্রথম স্পন থেকে ২৫ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। ২ কেজির একটি স্পন প্যাকেট থেকে একবার ফলনে ৩০০-৫০০ গ্রাম পর্যন্ত মাশরুম পাওয়া যায়। তিনি প্রতিদিন ২-৩ কেজি পর্যন্ত মাশরুম বিক্রি করে থাকেন। প্রতিকেজি মাশরুম বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকা দরে। তিনি মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ভবিষ্যতে মাশরুমের বীজ গবেষণা ল্যাব স্থাপনের ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। নানা পুষ্টিগুনে ভরপুর মাশরুম মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি। বর্তমানে প্রতিকেজি মাশরুম ২শ’ থেকে আড়াই’শ টাকা এবং প্রতিকেজি পাউডার মাশরুম দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় শাহিন মোল্লার মতো দোহার-নবাবগঞ্জের অনেক বেকার যুবক ঝুঁকছে মাশরুম চাষে।
উত্তর বাহ্রা গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, মাশরুম চাষ শুরুর দিকে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলেও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। শাহিন মোল্লা মাশরুম চাষে এই এলাকার একটি দৃষ্টান্ত। তার মতো অনেকেই যদি মানুষ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে তবেই বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।
শাহিনের উৎপাদিত মাশরুম দোহার ও নবাবগঞ্জের স্থানীয় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট , সুপারসপ ও বিভিন্ন হোটেলে বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন মাশরুম দিয়ে তৈরি মুখরোচক খাবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকতা নাহিদুজ্জামান জানান, মাশরুম চাষ একটি লাভজনক পেশা। এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। নবাবগঞ্জ কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাশরুম চাষিদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই এলাকার কোনো যুবক মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে তাকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আমরা আশা করি নবাবগঞ্জে মাশরুম চাষের বিপ্লব ঘটবে।