1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
July 27, 2024, 8:07 am

দোহার-নবাবগঞ্জে ভয়ংকর কিশোর গ্যাং

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : Sunday, May 23, 2021
  • 3690 Time View

দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় সমাজের অনেক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং সমস্যা। কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। এলাকায় মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, মারামারি এমনকি হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে বিপথগামী কিশোররা। দুই উপজেলার পাড়া-মহল্লায় চলছে গ্যাং কালচার। নিজেদের শক্তি জানান দিতে দলবেঁধে দেয়া হচ্ছে মোটর সাইকেল শোডাউন।
প্রিয় বাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, কেউ স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে, কেউ এখনো পড়ছে। তাদের আড্ডায় রয়েছে রকমফের। এদের আড্ডায় যোগ দেন তরুণ বখাটে, ছিনতাইকারী ও মাদক মামলার আসামিরাও। আড্ডার ছলে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ে। আর ‘বীরত্ব’ দেখাতে তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি সহ দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এবং প্রদর্শণ করছে এসব বিপথগামী কিশোর।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তাদের নানা অপকর্মে সাহস জোগান রাজনৈতিক দলের বড় ভাইয়েরা। এসব বড় ভাইদের অধিকাংশই সরকারি দলের নেতা।
দোহার উপজেলার প্রাণকেন্দ্রের লটাখোলা বিলের পাড়, চর জয়পাড়া, লটাখোলা, কিছুক্ষণ হল রোড, ভূতের গলি, খাড়াকান্দা, ইউসুফপুর সহ প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘিরে সংঘবদ্ধ হচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। সামান্য ঘটনায় ফোন পেয়েই জড়িয়ে পড়ছে মারামারির ঘটনায়। এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে বড় ভাইয়েরা এদের টানছেন। কিশোর থেকে শুরু থেকে তরুণেরা নানা মোহে পড়ে স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা।
প্রিয় বাংলার অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে, কেউ ঠেকায় পড়ে, কেউ সঙ্গদোষে আটকা পড়ছে বড় ভাইদের জালে। তবে বড় ভাইদের সাথে কৌশলে কথা বললে তাদের দাবি, রাজনীতি করার কারণে তাদের সভা-মিছিলে অনেকেই আসে। তবে কোনো কিশোরকে তাঁরা দলে রাখেন না তারা। সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থার নজরেও বিষয়টি রয়েছে বলে জানা গেছে। আলোচনায় রয়েছে কয়েকজন বড় ভাই। যারা বড় বড় নেতাদের সাথে উঠবস করেন এবং তাদের দালালি করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের যোগাযোগ বাড়ায় প্রেমঘটিত অপরাধও বেড়েছে। কিশোররা বিভিন্ন লাইক-কমেন্ট করে প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে কিশোরীদের সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে এই সম্পর্ক ভিডিওর মাধ্যমে অশ্লীলতায় পৌঁছে যায়। যার কারণে সম্প্রতি ব্ল্যাকমেইল করে কিশোরীদের ধর্ষণ ও ব্লাকমেইলের মতো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সম্মানহানির ভয়ের অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে আড়ালে। এদিকে করোনার মহামারিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এসব অসামাজিক ভিডিওতে লাইক কমেন্ট পাওয়ার জন্য একের পর এক অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা।
এছাড়াও বিভিন্ন সড়ক, খোলা জায়গায়, ব্রীজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে একত্রিত হয়ে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির নামে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, ইভটিজিং, পথচারীদের গতিরোধ, বাইক মহড়াসহ বিভিন্ন অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকে। গ্রুপগুলো একে অপরের ভিডিও কন্টেন্টে ‘লাইক’ ও ‘কমেন্ট’ করার আহ্বান জানায়। এক গ্রুপ লাইক বা কমেন্ট করার পর অপর গ্রুপটি যদি না করে এ নিয়েও গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যা হাতাহাতি, মারামারি ও খুনোখুনিতে গড়ায়। দোহার নবাবগঞ্জের কিশোরদের নিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। যে গ্রুপের মাধ্যমেও বিভিন্ন অপরাধে সংঘবদ্ধ হচ্ছে কিশোররা। উদ্ভট নাম নিয়ে গড়ে ওঠা এসব গ্রুপের সদস্যদের অনেকেই স্কুল-কলেজের গন্ডি পার হয়নি। পাড়া-মহল্লায় এরা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা তৎপর।
এ বিষয়ে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা হলে তাদের মন্তব্য, কিশোর বয়সে হিরোইজম ভাব থাকে। এই হিরোইজমকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে। আবার কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে ভিনদেশি সংস্কৃতি ইচ্ছামতো তাদের আয়ত্বে চলে যাওয়ায় তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সমাজের শিক্ষক, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি বা যাদের কথা শুনবে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে এই কিশোর গ্যাং কালচার থেকে বিপথগামী কিশোরদের সুপথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
পুলিশও বলছে, তাদের একার পক্ষে এটি রোধ করা সম্ভব নয়। অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বর্তমানে কিশোর গ্যাং একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই না তারা ড্রাগ (মাদক) নিয়ে নষ্ট হয়ে যাক। বিষয়গুলোর প্রতি পরিবারের সদস্যদের সচেতন হতে হবে। এটা আপনাদের দায়িত্ব। দায়িত্ব না নিতে পারলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন কেন? এ দায়িত্ব পরিবারকে নিতেই হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category