গৃহ শ্রমিকেরা বাসাবাড়ির কাজ করেন বলেই রাষ্ট্রের, দপ্তরের দায়িত্ব নির্বিঘ্নে সামলাতে পারছেন কর্মকর্তারা। অথচ সেই গৃহকর্মীরাই থেকে যাচ্ছেন অধিকার বঞ্চিত। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা প্রণয়ণ করা হয়েছে এক দশক আগে, তা এখনো আইনে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনায় ন্যায় ক্ষতিপূরণ পান না গৃহশ্রমিকরা। এমন কি নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডের পরও ন্যায্য বিচার পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।
রাজধানীর মিরপুরে নাগরিক সমাজ ও গৃহকর্মী ফোরামের এক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। মিরপুর-১১-এ অবস্থিত বাংলাদেশ ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (বিডিআরএফ) বৃহস্পতিবার সকালে ‘গৃহকর্মীদের সুরক্ষা, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সংলাপ’ হয়। মিরপুরের গৃহকর্মী আঞ্চলিক ফোরাম আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সহযোগিতা করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কর্মজীবী নারী ও সুনীতি প্রকল্প। সংলাপে সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন অংশীজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, আইনজীবী, সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
গৃহকর্মী জাতীয় ফোরামের সভাপতি জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে সংলাপ সঞ্চালনা করেন কর্মজীবী নারীর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক ডা. তামান্না নাসরীন।
ডা. তামান্না নাসরীন বলেন, ‘আমার ধারণাও ছিল না যে গৃহকর্মীদের নিয়ে এত কার্যকরী উদ্যোগ ও কার্যক্রম চলছে।’ তিনি শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গৃহকর্মী ও তাদের পরিবারের সন্তানদের জন্য বিদ্যমান স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবিষয়ক সেবাগুলো তুলে ধরেন।
বাসা ফাউন্ডেশনের লিগ্যাল এক্সপার্ট অ্যাডভোকেট ফারজানা জানান, ‘এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরের ৩৫টি বস্তিতে আইনি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’
সাংবাদিক এহ্সান ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম, সাহিত্য ও বিনোদনমাধ্যম থেকে আলোড়িত হন। তাই এ সব ক্ষেত্রে গৃহ শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের লেখালেখিও করা দরকার। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বাড়ানো দরকার।’
অ্যাডভোকেট তারেক রহমান বলেন, ‘আইনে শ্বশুর বাড়িতে কোনো গৃহিনীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে স্বামীকেই প্রমাণ করতে তিনি হত্যার সঙ্গে জড়িত নন। এই ধরনের আইন গৃহ শ্রমিকের ক্ষেত্রেও হওয়ার দরকার। অথচ বাসাবাড়িতে গৃহ শ্রমিককের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কারণে ওই শ্রমিকের পরিবার মামলাও করতে পারেন না, অনেক সময় ঘটনা ধামাচাপ দিয়ে ফেলেন নিয়োগ কর্তা।’
সাংবাদিক তৌফিক হাসান বলেন, ‘কেবল সমাজের ওপর দায় চাপিয়ে লাভ নেই। সমাজে মাদকের বিস্তার কেবল ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যাপার নয়, রাষ্ট্রীয় ব্যাপারও। রাষ্ট্র যদি মানুষের দক্ষতা বিকাশের যথাযথ ব্যবস্থা করে, বেকারত্ব দূর করে, তাহলে মাদকাসক্তির পরিমাণও কমে আসতে পারে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক তাসনুভা আহমেদ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর প্রোগ্রাম অফিসার নার্গিস সুলতানা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৬ নম্বর ওয়ার্ড সচিব এম এ সামাদ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা মো. শহীদুল হকসহ অন্যরা। সংলাপে গৃহকর্মীদের স্বীকৃতি, অধিকার ও সেবা পাওয়ার পথ সুগম করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের ভূমিকা, করণীয় ও সমন্বয়ের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তাঁরা।
গৃহকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই ধরনের সংলাপ সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অংশগ্রহণকারীরা।
মন্তব্য করুন