ঢাকার নবাবগঞ্জে ওয়াক্ফ করা কয়েকশত জমির মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ফজলুর হক ফজল নামে এক মাটি খেকোর বিরুদ্ধে। উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের বিপ্রতাশুল্ল্যা মৌজার ওয়াক্ফকৃত প্রায় ৭১২ শতাংশ জমি দখল করে মাটি কেটে বিক্রি করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, ওয়াকফকৃত জমির পাশে ফজলুর জমি। এসুযোগে নিজের জমির মাটি বিক্রির পাশাপাশি ওয়াক্ফকৃত জমির মাটিও কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগের নেতাদের ম্যানেজ করে দেদাচ্ছে করেছে মাটি ব্যবসায়। আর ৫ আগস্টের পর পরিচয় দিচ্ছেন বিএনপি নেতা হিসেবে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি আবারো কৃষি জমি কাটা শুরু করেন ফজলু। তবে স্থানীয়দের বাঁধা মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, ওয়াকফ জমির মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছে ফজলু।
কাগজপত্রে দেখা যায়, বিপ্রতাশুল্লা মৌজার আরএস ৫০৭, ৫৮১, ৫৮৫, ৫৮৬, ৫৮৮, ৫৮৯, ৫৯০, ৫৯১, ৫৯৬, ৫৯৭, ৫৯৮, ৫৯৯, ৬০০, ৬০১ ও ৬০২ এর বেগম ফয়জুন্নেছা ওয়াকফ স্টেট এর সম্পত্তি। বেগম ফয়জুন্নেছা ওয়াকফ স্টেটের পক্ষ থেকে সৈয়দ ওবায়েদ সাকীকে দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্ত ফজলু জমিটিকে নিজের বলে দাবি করে তা রেখেছেন রেখেছেন নিজের দখলে। ইতিমধ্যে সেখানে থেকে মাটি কেটে বিক্রি করেছেন, আবারও মাটি কাটার প্রস্ততি নিচ্ছেন।
প্রতিবেদকের হাতে আসা কয়েকটি স্ট্যাম্পে দেখা যায়, ফজলুর হক ফয়জুন্নেছা ওয়াকফ স্টেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দ ওবায়েদ সাকীর নিকট হতে ১৫/৭/২০১৭ তারিখে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিপ্রতাশুল্লা মৌজার আরএস ৫৯৯, ৬০০, ৬০১ দাগে ১৮৫ শতাংশ, অন্য একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে একই মৌজার আরএস ৫০৭, ৫৮১, ৫৯৬, ৫৯৭, ৫৯৮ ও ৬০২ দাগে ২৪৯ শতাংশ এবং আলাউদ্দিন খান একই ব্যক্তির কাছ থেকে আরএস ৫৮৮, ৫৮৫, ৫৯০, ৫৮৬, ৫৮৯ ও ৫৯১ দাগে মোট ২৭৮ শতাংশ সব মিলিয়ে ৭১২ শতাংশ জমি দেখাশুনার দায়িত্ব নিয়েছেন৷ কিন্ত সেখানে স্পষ্ট লেখা রয়েছে শুধু ব্যবহার করতে পারবে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ফয়জুন্নেছা ওয়াক্ফ স্টেটের জমি এভাবে হস্তান্তরের নিয়ম আছে কি না? আর কেউ ব্যবহারের জন্য নিলে অনুমতি ছাড়া মাটি কেটে বিক্রির বিধান আছে কি না দেখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
তারা আরো বলেন, ফজলু ১৭/১৮ বছর আওয়ামী লীগের আমলে দেদাচ্ছে মাটির ব্যবসা করেছে। কৃষি জমিকে পুকুরে পরিণত করেছে মাটি কেটে। এখন আবার নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবি করে মাটি ব্যবসায় নেমে পড়েছে। তাছাড়া ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত
অভিযোগের বিষয়ে ফজলু বলেন বলেন, আমার জমিগুলোর মাঝে ওয়াকফ জমিগুলো রয়েছে। তবে সেগুলোর মালিক আমি। তিনি দাম্ভিকতার সুরে বলেন, আমার জমি আমি কাটতেই পারি। ১৮ বছর মাটির ব্যবসা করেছি। কিন্ত বিগত ২ বছর ধরে করি না। নিজের জমি কেটে জমির পাশেই একটা ঘর বানাতে চেয়েছিলাম কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য। তবে বাধা আসায় আপাতত বন্ধ রয়েছে। আমি বিএনপি করি, এখন আবার মাটি কাটা শুরু করলে সবাই ম্যানেজ করেই করবো। তবে নিজের কাগজপত্র দেখাতে গরিমসি করেন তিনি।
এব্যাপারে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার নম্বরে কল দিলেই তাদের পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী ওয়াকফ প্রশাসক ফরিদ আহমেদের স্ত্রী জানান তিনি হজে গেছেন।
মন্তব্য করুন