ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় এক বাক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের পর শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার বিকেলে ঢাকা জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ তথ্য জামান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
গ্রেপ্তার সুজন মিয়া (২৫) শরীয়তপুর জেলার গোসাইর হাট থানাধীন কোদালপুর গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, উপজেলার কলাতিয়া সাধুপুর এলাকায় সোমবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির সামনে থেকে এক ব্যক্তি ফুসলিয়ে জন্মগত বাকপ্রতিবন্ধী লতাকে কদমতলী শুভাঢ্যা এলাকায় সাবান ফ্যাক্টরির পাশে নিয়ে যায়। পরে তাকে ধর্ষণ করে তার শরীর আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়। সংবাদ পেয়ে রাতে থানা পুলিশ মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়ার আগে দগ্ধ অবস্থায় লতা পুলিশের কাছে আকার-ইঙ্গিতে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন বলে দাবি করেন নিহতের পরিবার।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই নারীর শরীরের প্রায় ৬৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই স্বপন সরকার বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে অজ্ঞাতদের আসামি করে মঙ্গলবার রাতে একটি হত্যা মামলা করে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, নিহত বাকপ্রতিবন্ধী লতা সরকার ও আসামী সুজন মিয়া কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কলাতিয়া ইউনিয়নে একই গ্রামে বসবাস করতেন। লতা সরকার একটি বালুর গদিতে কাজ করতেন। সুজন ইশারায় ইঙ্গিতে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি হন ওই নারী। ঘটনার দিন বিকেল বেলায় সুজন বালির গদির খাটে লতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
এরপর থেকেই লতা সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকেন। সুজন তখন লতাকে কাপড়-চোপড় নিয়ে রাতে বাড়ির পাশে গাব গাছ তলায় অপেক্ষা করতে বলেন। লতা চলে গেলে সুজন লতাকে দূরে কোনো নির্জন জায়গায় নিয়ে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।
সুজন ভিকটিম লতার সঙ্গে হত্যার আগেও শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল জানিয়ে পুলিশ সুপার আরও জানান, লতাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে কেরানীগঞ্জের আটি বাজার এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শেষে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা শুভাঢ্যা সাবান ফেক্টরি এলাকায় নিয়ে সুজন লতাকে হত্যা করে। এসময় লতা চিৎকার করলে সুজন তার গলা টিপে ধরে পাশেই পড়ে থাকা জমাট পড়া সিমেন্টের বস্তার ওপর মাথা রেখে ইট দিয়ে পিটিয়ে মাথা থেতলে দেন।
পরে রাস্তার পাশে একটি শুকনো খাদে ফেলে লতা সরকারের ব্যাগে থাকা কাপড় দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় লতা সরকারের শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে যায়। মৃত্যুর আগে লতা সরকার পুলিশের কাছে হাতের ইশারায় ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে ২৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় লতার।
পরে এ ঘটনায় করা মামলার পর ২রা ডিসেম্বর (শুক্রবার) ভোরে মুল আসামী সুজনকে তার শশুর বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ সময় সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ তদন্ত) আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশিশরা হাবিবা খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরানীগঞ্জ (সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ওসি মোহাম্মাদ শাহ্ জামান প্রমুখ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.