1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বাঁশের সাঁকোই ভরসা ৩০ হাজার মানুষের • PRIYOBANGLANEWS24
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১০:১০ অপরাহ্ন

বাঁশের সাঁকোই ভরসা ৩০ হাজার মানুষের

শামীম হোসেন সামন, নবাবগঞ্জ
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২
  • ২৭৮ বার দেখা হয়েছে।

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রাজাপুর নয়াডাঙ্গী খালের ওপর নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলাচল করছে প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা। তিন যুগের বেশি সময় ধরে একটি পাকা সেতুর অভাবে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী জানান, শুকনো মৌসুমে তাঁরা নিজেদের বাড়ির বাঁশ দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো তৈরি করেন। এই সাঁকো দিয়ে জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১২ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেকবার এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁরা দেব-দিচ্ছি করে শুধু সময় পার করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজাপুর, নয়াডাঙ্গী, কেদারপুর, রায়পুর, ঘোষাইল, আর ঘোষাইল, শ্যামপুর, ধুলশুড়া গ্রামের লোকজন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। এই পথে সাঁকো পার হয়ে ঘোষাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও ঘোষাইল বাজার, বারুয়াখালী বাজার, বান্দুরা বাজার, মসজিদ, ব্যাংক ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লোকজনকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এই বাঁশের সাঁকোই চলাচলের একমাত্র ভরসা। বর্ষায় স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রতিদিন হাজারো পথচারীকে এই সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

এলাকাবাসী জানান, কেউ কথা রাখছে না। জনপ্রতিনিধিরাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন। সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

প্রতিবছর এলাকাবাসীর অর্থ আর স্বেচ্ছাশ্রমের বাঁশের সাঁকো মেরামত করা হয়। এই সাঁকোর ওপর দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য যেন এটা একটা মরণফাঁদ।’

নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাছে আসেন ভোট চাইতে। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন তাদের যাতায়াতের পথে সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার। কিন্তু নির্বাচনের পর কেউ আর গ্রামবাসীর খোঁজখবর নেন না।’ বছরের ছয় মাসই বাঁশের সাকোয় পারাপার হতে হয়। তবে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায় বর্ষা মৌসুমে। এ সময় একমাত্র নৌকা ছাড়া উপায় থাকে না স্থানীয়দের।

ঘোষাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আল আমিন বলেন, ‘বর্ষাকালে আমাদের প্রায়ই স্কুলে যেতে দেরি হয়। নৌকা না থাকায় ঠিক সময়ে খাল পার হওয়া যায় না। ফলে অনেক সময় ক্লাসও মিস হয়। আবার হাত থেকে বই পানিতে পড়ে ভিজে যায়।’

রাজাপুর গ্রামের ছোবহান উদ্দিন বলেন, ‘কেউ অসুস্থ হলে বিপদে পড়তে হয়। বর্ষাকালে সন্ধ্যায় নৌকা বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে কিংবা হাসপাতালে যাওয়া দরকার- এমন পরিস্থিতিতে পল্লী চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।’

নয়াডাঙ্গী গ্রামের মবজেল খান বলেন, ‘সেতু না থাকার কারণে এই এলাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্প্রসারণ হচ্ছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মানুষের জীবন যাত্রারও পরিবর্তন হচ্ছে না। ‘যারা এই এলাকায় থাকেন তারাই শুধু এখানকার মানুষের কষ্ট বোঝেন। অনেকে আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু সেতু আর হয়নি।’

একই গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাঁকোটি বর্ষার পানিতে ডুবে যাওয়ায় পারাপারে সবসময় ভয়ে থাকি। বিশেষ করে বর্ষাকালে বিশালাকৃতির এই সাঁকো পার হতে কষ্ট হয়। প্রায় সময় পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কিছুদিন আগেও সম্পূর্ণ ভাঙা ছিল সাঁকোটি। এলাকার কয়েকজন যুবক সংস্কার করে কিছুটা চলাচলের উপযোগী করেছে।

গ্রামবাসীরা জানান, এক-দুই দিনের নয়, বছরের পর বছর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেকবার দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছে। বর্ষায় এ দুর্ভোগ পৌঁছায় আরও চরমে। সাঁকো মেরামতে সরকারি কোনো অনুদানও পাওয়া যায় না।

প্রতিবছর দুই পারের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ-খুটি। জনপ্রতিনিধিরা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও পরে আর তা বাস্তবায়ন হয় না বলে অভিযোগ তাদের। তাই অবিলম্বে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সেতু না থাকায় যাতায়াত, উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে আনা-নেয়া, অন্যান্য মালামাল বহনে ভোগান্তির শেষ নেই। শুধু বাঁশের একটি সাঁকো ১২ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। ফলে কৃষিসমৃদ্ধ এই এলাকায় আজও তেমন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। এখানে একটি ব্রিজ নির্মিত হলে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সময় ও অর্থেরও সাশ্রয় হবে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, স্থানীয় এমপি সালমান এফ রহমানসহ উপর মহলে কথা বলে দ্রুত পাকা সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। ’

এখান থেকে আপনার সোস্যাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

ক্যাটাগরির আরো খবর
© এই ওয়েবসাইটি প্রিয়বাংলা২৪নিউজ.কম দ্বারা সংরক্ষিত।
পিবি লিংক এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান