ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে একযোগে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবারে মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় ধানের ফলন নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন সব শ্রেণির কৃষক। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও শ্রমিক সংকটের কারণে হতাশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। টানা বৃষ্টির কারনে ধানকাটা, মাড়াই, শুকানোর কাজ করতে পারছেন না তারা। কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই ধান ক্ষেতে হাঁটু পানি জমছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। দ্বিগুন মজুরিতে পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। বৃষ্টি আর শ্রমিক সংকটে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাঁটু পানিতে ধান কাটছেন কৃষি শ্রমিকরা। হঠাৎ বৃষ্টির কারনে ফলন ভালো হলেও পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়েই দুশ্চিন্তায় তারা।
বারুয়াখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক জিন্নত আলী বলেন, প্রায় ১ একর জমির ধান হাঁটু পানির নিচে। বৃষ্টিতে ভিজে ধান কাটলেও তা শুকানোর ভোগান্তির কোন শেষ নেই। একদিকে ধান ক্ষেতে বৃষ্টিতে হাঁটু পানি জমছে অন্যদিকে ভেজা ধান শুকাতে না পেরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি জমি হাটু পানিতে নিমজ্জিত, এই ধান এখন গলার কাঁটা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবাবগঞ্জে ধান কাটা কাজে যোগ দেয়া শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগই আসেন সিরাজগঞ্জ, রংপুর এবং পাবনা থেকে। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সেই সংখ্যা খুবই কম।
উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের মুন্সীনগর এলাকার কৃষক রফিক মিয়া বলেন, ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে জানান তিনি। তবে শ্রমিক সংকটের কারনে বৃষ্টিতেও পাঁকা ধান কাটতে পারছেন না। ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে ধান ।
নূরনগর গ্রামের কৃষক গৈজদ্দিন বলেন, এবার ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু বৃষ্টির কারনে ক্ষেতে পানি জমছে। এখনও ধান কাটতে পারেননি তিনি।
জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কঠুরি এলাকার জাফর মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিতে পানি জমেছে ক্ষেতে। ধান রোপন করে পাকা ধান নিয়ে বিপাকে আছি’।
সলিম উদ্দিন নামে এক কৃষক জানান, ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছেন। প্রায় সব জমির ধানই পাঁকা শেষ। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টির কারনে ধান কাটা নিয়ে চিন্তায় আছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে ৫৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। বৃষ্টির কারনে কিছু কিছু জায়গায় ধানের ক্ষতি হয়েছে। পোঁকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় সঠিক সময়ে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে ১৪টি ইউনিয়নে ধান কাটার জন্য ৫টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দেওয়া হয়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকরা। এবার ধানের দাম বেশি হওয়ায় আগামী বছর বোরো ধানের আবাদ বাড়বে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.