ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিনের ঝাউবাড়ী এলাকায় ঘরের তালা ভেঙে নদী দাস (১৪) নামে এক কিশোরীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের টিম নমুনা সংগ্রহ করেছে। নিহত নদী দাস মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার জয়মন্ডব গ্রামের মৃত জগদিস দাসের মেয়ে।
শনিবার (৭ মে) রাত ১১টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ (মিটফোর্ড) মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। ঘরের দরজা বাহির থেকে তালাবদ্ধ থাকায় পুলিশের প্রাথমিক ধারনা এটা একটি হত্যাকান্ড হতে পারে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই স্বপন ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে, গত ৮ মাস ধরে নিহত নদী ও তার বাবাসহ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ঝাউবাড়ি এলাকার আনিসুর রহমানের চার তলা ভবনের নিচতলায় ভাড়া বসবাস করত। গত একমাস পূর্বে নদীর বাবা জগদিস দাস মারা যায়। পরে তার মা রুমা দাসকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করছিল মা ও মেয়ে। গত তিন দিন পূর্বে বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে তারা ঘরে তালা মেরে চলে যায়।
শনিবার (৭ মে) রাতে পাশের ফ্লাটের সুমা গ্রাম থেকে ফিরে আসলে আশপাশ থেকে দুগন্ধ পেয়ে বাড়িওয়ালাকে খবর দেয়। খবর পেয়ে বাড়িওয়ালা আনিসুর রহমান দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশকে জানায়। রাতেই পুলিশ এসে ঘরের তালা ভেঙে নদীর ফাঁপা ফোলা অবস্থায় মৃতদেহ খাটের উপর দেখতে পায়। তখন ঘরের ভিতর ভাঙা কাঁচের চুকরো, ব্যাগ ভর্তি কাপড় ও ময়লার ছোট ডাস্টবিনে অনেকগুলো ইনজেকশনের সিরিজ ও কিছু ট্যাবলেটের খালি খোসা দেখতে পায়। মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এসময় নদীর মা রুমা দাসকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পাশের ফ্লাটের ভাড়াটিয়া সুমা জানায়, বৃহস্পতিবার (৫ মে) সন্ধ্যায় মা ও মেয়ের মাঝে তুমুল ঝগড়াঝাটি হয়। এক পর্যায়ে মা রুমা দাস মেয়ে নদী দাসকে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে প্রতিবেশিরা বুঝিয়ে মা ও মেয়েকে মিল করিয়ে দিয়ে নদী ফের ঘরে দিয়ে যায়।
নিহত নদী দাসের নানা স্বপন সেন বলেন, বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকালে আমার মেয়ে রুমা ফোন করে আমার কাছে ঔষধ ও বিদ্যুৎ এর মিটারে কার্ড ভরার জন্য ২ হাজার টাকা চায়। আমি অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করে মেয়েকে পাঠিয়ে দেই, মেয়ের সাথে এই ছিল আমার শেষ কথা। কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতেছি না, মেয়ে রুমারও কোন খোঁজ পাচ্ছি না।
সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ইন্সপেক্টর হাসানুল করীম বলেন, নিহতের চোখ ও জিভ অনেকট বড় হয়ে বের হয়ে গেছে। আমরা ঘর থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে বলা যাবে মৃত্যুর সঠিক কারন। তবে ঘরে কিছু ঘুমের ট্যাবলেট, প্লেটে জুঠা খাবার, জুস, ২ টা মোবাইল ও ইনজেকশনের সিরিজ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ঘরে ভাংচুরের কিছু আলামত পাওয়া গেছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে নদী নামের এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছি। তদন্তশেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.