গরু কিংবা মানুষ নয়, ঘানি টানছে বিদ্যুৎচালিত অটোরিক্সা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। স্থানীয়ভাবে নির্মিত এ অটোরিক্সা মানুষ ছাড়াই অনবরত ঘোরাচ্ছে ঘানি। আর এতেই সরিষা থেকে তেল তৈরি করছে।ঢাকার নবাবগঞ্জে উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণখালী এলাকার হানিফ বেপারীর ছেলে মো.শামীম হোসেন।
শামীম ঘানি দিয়ে মাড়াই করা সরিষার তেল বিক্রির পেশা বংশ পরম্পরায় করে আসছেন। একসময় ঘানি টানার গরু পালনের ব্যয় আর সীমিত পরিমাণ উৎপাদনের কারণে কোনো রকমে সংসার চালাতে হতো। এ অবস্থায় তার বাড়ির পাশেই অটোরিক্সা মেকানিক ঘানি ঘোরানোর জন্য একটি অটোরিকশা তৈরি করে দেওয়ায় উৎপাদনের পাশাপাশি লাভও বেড়েছে।
সময়ের সাথে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে জীবনের নানা পরির্বতন হয়েছে শহরের সাথে গ্রামেরও। যন্ত্র নির্ভর হচ্ছে মানুষ। হাজার বছরের বাঙ্গালী ঐতিহ্য হারিয়ে গিয়ে মানুষ এখন আধুনিক যুগের যান্ত্রিক সভ্যতায় মিশে যাচ্ছে। এসব যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি তেলের ঘানি টানার দৃশ্য দেখতে তিদিন শত শত মানুষ ভীড় করছেন তাদের ঘানিতে।
নিজের তৈরি অটোরিক্সার ঘানি নিয়ে মো ঃ শামীম হোসেন বলেন, ‘মেশিনে যন্ত্রের মাধ্যমে সরিষা পিষে তেল বের করার ফলে তার গুণগত মান সঠিক থাকে না। কিন্তু আমরা কাঠের ঘানিতে তেল উৎপাদন করছি। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে জীবন্ত গরু ব্যবহার না করে যান্ত্রিক কলের গরু ব্যবহার করছি আমরা। এখন আমার এই সরিষার তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অটোরিক্সা দিয়ে ভালো ভাবেই তেল ভাঙা যায়। বিদ্যুৎ থাকলে সারাদিনই চালানো যায়। ঘানি টানতে যেভাবে গরু চারিদিকে ঘুরতো ঠিক অটোরিক্সার সুইচ অন করলেই গরুর মতো ঘুরতে থাকে অটোরিক্সা। আগে গরু দিয়ে ৭-৮ ঘন্টায় যে তেল উৎপাদন করতাম এখন ৩-৪ ঘন্টায় হচ্ছে। এতে গরুর চেয়ে অটোরিক্সা ঘুরানোর মাধ্যমে তেল উৎপাদন করে অনেক লাভবান হচ্ছেন।’
ব্রাহ্মণখালী এলাকার রাহাত হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলায় আমাদের এলাকায় দেখতাম গরু দিয়ে ঘানি টানছে। কিন্তু আধুনিকতার যুগে গরুর পরিবর্তে অটোরিক্সা দিয়ে ঘানি টানছে। এতে সময়ও কম লাগছে লাভও বেশি হচ্ছে।’
শিকারীপাড়া ইউনিয়নের বিষমপুর এলাকার সামির হোসেন বলেন,‘ মেশিনে ভাঙানো সরিষার তেল সবসময় কিনে থাকি। একজনের কাছে শুনলাম এখানে ঘানির সরিষার তেল পাওয়া যায়। তাই এবার এখান থেকেই কিনলাম। তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি ঘানির উৎপাদিত তেলের স্বাদ, গন্ধ, ঝাঁঝ সবই আগের মতোই ।
বর্তমানে বাজারে দেশী সরিষা প্রতিমণ তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। প্রতি ঘানিতে ১০ কেজি সরিষার থেকে ৩ লিটার তেল উৎপাদন করে। আগে তিন লিটার তেল গরুর ঘানিতে উৎপাদন করতে সময় লাগতো ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। এখন অটোরিক্সা দিয়ে ঘানি টেনে ৩ লিটার তেল উৎপাদন করতে সময় লাগে মাত্র দেড় থেকে ২ ঘন্টা। এ পদ্ধতির ব্যবহার করে একদিকে যেমন শারিরীক পরিশ্রম কমে এসেছে তেমনি তেল উৎপাদনের সময় কমে গেছে। বর্তমানে অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টেনে প্রতিদিন ৪০ কেজি সরিষা থেকে ১০ থেকে ১১ লিটার তেল উৎপাদন করা যায়। আর উৎপাদিত প্রতি লিটার তেল খুচরা বিক্রি করছেন তিন থেকে সাড়ে ৩শ টাকা। এতে প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে ৮-৯ শ টাকা আয় হয়।
উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণখালী এলাকা হাছেন বেপারী বলেন, ‘আমাদের গ্রামে একসময় গরুর ঘানি ছিল। আধুনিকতার যুগে বিদ্যুৎচালিত অটোরিক্সার ঘানি টেনে সংসার চালাচ্ছেন শামীম। দীর্ঘদিন ঘানি টানার পর এখন স্বাবলম্বী হয়েছে। এতে তাদের কষ্ট কমেছে। এটা একটা সম্ভবনাময় কাজ বলে আমি মনে করি।’
মন্তব্য করুন